অন্তর্বতীকালীন সরকারের আইন ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতির ক্যাশিয়ার ছিলেন তারই ছোট বোন শেখ রেহানা। আর শেখ রেহানার ক্যশিয়ার ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক মন্ত্রী জোনায়েদ আহমেদ পলক। তারা বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন। তখন দুদক ছিল, উচ্চ আদালত ও প্রশাসনও ছিল কিন্তু বিচার হয়নি। তাদেরকে কেউ ধরেননি।
গতকাল সোমবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ মিলনায়তনের আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠান শেষে আইন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
তিনি বলেন, সদ্য পদত্যগকারী দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈদুদ্দীন আবদুল্লাহ নেতৃত্ব¡াধীন কমিশন শেখ হাসিনার সরকারের মন্ত্রী,এমপি, রাজনৈতিক নেতা এবং তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য অনুমোদন দিয়ে গেছেন। তাহলে এখন দুদকের কর্মকর্তাদের ওইসব দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্তে বাধা কোথায়। তিনি যোগ করেন, বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদের পক্ষ থেকে তো কোন ধরনের চাপা দেওয়া হচ্ছে না। এখন তো দুদক কর্মকর্তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন।
আসিফ নজরুল বলেন, ৫ আগস্টের পরে দুদক একেবারেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। ফলে এখনো ভয়াবহ ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির খবর আমরা পাচ্ছি। এটি আমাদের বন্ধ করতে হবে। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত কমিশন দিয়ে হবে না। আমাদেরকে দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিশন গঠন হবে।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকাররের আমলে বিচার হয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার। তিন কোটি টাকা ব্যাংকে ছিল, ৬ কোটি টাকা হয়েছে। ওই টাকা কেউ স্পর্শ করে নাই, অথচ সেজন্য এই দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দুদক-এর মামলায় ১০ বছরের জেল দিয়ে দিয়েছেন আদালত। এই দেশের দুদক আর বিচার বিভাগ মিলে খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠিয়েছে। আর এই দেশের চিহ্নিত চোর প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) যার পুরো পরিবার ছিল চোর, সে সারাদেশে বলে বেড়াতো এতিমের টাকা নাকি খালেদা জিয়া আত্মসাৎ করেছে। এই চোরের মুখের সামনে কেউ কোনো কথা বলতে পারত না। দুদক তার দাসে পরিণত হয়েছিল, বিচার বিভাগ তার দাসে পরিণত হয়েছিল।
আসিফ নজরুল বলেন, শেখ হাসনিার সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। দুদকে বর্তমানে যারা কাজ করছেন, আপনারা সেই সব দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তদন্ত করুন, প্রমাণ করুন তাদের মাধ্যমে আপনাদের হৃদয় পরিবর্তন হয়নি। এখন তো কাজের সুযোগ এসেছে।
শেখ হাসিনার আমলে প্রতিটি দপ্তরই অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভূমি অফিসে নাম জারি করতে গিয়েছি, সেখানে ১০ লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছে আমার কাছে। ভূমি অফিসে যে লোকজন ছিল, তাদেরকে কি শেখ হাসিনা বলে গিয়েছিল তোমরা ঘুষ নিবা। সবকিছুর দায় চোরের নেত্রীকে দিলেই হবে না, নিজেদের কথা চিন্তা করুন। আপনি নিজে কতটা সততার জায়গায় আছেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, দুদকের চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনারের পদত্যাগ করার পর আমাদের কাজকর্মে কিছুটা অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এই অচলাবস্থা দূর করার জন্য অবিলম্বে দুদকে বর্তমান আইনেই নতুন কমিশন নিয়োগ দেওয়ার চিন্তা সরকারের রয়েছে।
তিনি বলেন, দুদক সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান সাহেব অন্তর্বর্তীকালীন একটা অবস্থার কথা বলছেন কিন্তু এটা করতে গেলে আবার আইন পরিবর্তন করতে হবে। সমস্যা হলো এখন যদি পরিবর্তন করা হয়, তারপর যদি সংস্কার কমিশন চূড়ান্তভাবে আবার আইন পরিবর্তন করতে বলে, তাহলে বিষয়টি কেমন দেখায়। এখন কোনটি আসলে সর্বোত্তম হবে, এটি নিয়ে আমরা বিচার-বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।
অনুষ্ঠানে দুদক সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে দুর্নীতিবাজরা রাষ্ট্র কাঠামো দখল করে রেখেছে, যাতে সব অন্যায় ও দুর্নীতি থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এভাবেই দুর্নীতিগ্রস্ত কর্তৃত্ববাদী সরকারের জন্ম হয়েছে। সংস্কার কাজ করতে গিয়ে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিসহ দুদক কর্মকর্তাদের দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র ধরা পড়েছে। এখন সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা ছাড়া উপায় নেই।
সংস্কার কমিশন প্রধান আরও বলেন, দুদক এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যেখানে কোনো সিদ্ধান্ত হয় না কমিশনার ছাড়া। দুর্নীতির যে বিষয়গুলো চলমান ছিল এখনো চলছে। কাজে আমাদেরকে দ্রুততম সময়ে কমিশন গঠন করতে হবে।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমাদের ওপর যে কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা চেপে বসেছিল, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে সেই কর্তৃত্ববাদীতার অবসান হয়েছে। এই তরুণ প্রজন্ম আমাদের জন্য যে সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে, সে আলোকে রাষ্ট্র সংস্কার এবং রাজনৈতিক সমঝোতার পথ আমাদের তৈরি করতে হবে। আমরা তরুণদের দেখানো পথেই দেশবাসীর প্রত্যাশিত সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছি।
আ. দৈ. /কাশেম/এমআই