বগুড়া জেলা এবং গাইবান্ধার সাঘাটাসহ আশ পাশের বিভিন্ন এলাকায় অতীতে ভালো বিজের অভাব, প্রতিকুল আবহাওয়া ও চাষাবাদে আধুনিক ধারনা না থাকায় মাসকলাই ফসল চাষাবাদে দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন কৃষক। কিন্তু অধিক বৃষ্টিপাত ও বন্যার আশঙ্কায় এ আবাদ নিয়ে চিন্তায় ছিলেন কৃষকরা।
তবে এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় সাথি ফসল হিসেবেও অন্যান্য ফসলের সাথে কিভাবে মাসকলাই চাষাবাদ করলে লাভবান হওয়া যায়, সে বিষয়ে সময়মত সঠিক ধারনা লাভ করায় এবার বগুড়ার পাশ্ববর্তি গাইবান্ধার সাঘাটায় মাসকলাই ফসল চাষাবাদে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকের। ডাল হিসাবে খ্যাত এ মাসকলাইয়ের বাজারেও ভাল দাম থাকায় বেশ লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা।
উপজেলার বাটি গ্রামের কৃষক জালাল উদ্দিন এবার ২০ শতাংশ জমিতে মাসকলাই বপণ করেছেন। সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে বীজ বপণের পর এখন ক্ষেতের গাছ বেশ টকবগে হয়ে উঠেছে। নভেম্বর মাসের শেষ সময়েই মাড়াই করা যাবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার দক্ষিণ সাথালিয়া গ্রামের এনায়েত হোসেন, সেলিম উদ্দিন, কসিম উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম ও গোবিন্দী গ্রামের কানু সরকার সহ এবার অনেক কৃষক এ মাসকলাই চাষাবাদ করেছেন।
অন্যান্য আবাদের চেয়ে এ আবাদে তেমন কোন পরিচর্যা না লাগা ছাড়াও বাজারে চাহিদা ভালো থাকায় আবাদের পরিমাণ বেড়েছে বলে জানালেন কৃষকরা। বিগত দিনে ভালো দাম পাওয়ায় এবারও আবাদ করেছেন বলে জানালেন, উপজেলার বসন্তেরপাড়া গ্রামের কৃষক তছলিম উদ্দিন ও মামুনুর রশিদ। প্রথমে বীজ বপণ করে একবার সার পানি দিলেই পরিপক্ক হয়ে ওঠে গাছ।
এ চাষাবাদে তেমন কোন পরিচর্যা লাগেনা বলে জানালেন, ওই এলাকার কৃষক আসাদুল ইসলাম। উপজেলার বোনারপাড়া এলাকার কৃষক ইয়াকুব আলী জানান, এক সসময় পরিত্যাক্ত সকল জমি, ভিটেঘাটায়, রাস্তার পাশেও মাসকলাই বিনা পরিচর্যায় চাষ হতো। বীজ বপণ করার পর তেমন কিছুই করা লাগতো না। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সুত্রে জানা গেছে, এবার প্রণোদনা কর্মসুচির আওতায় উপজেলার ২২০ জন কৃষককে ৫ কেজি করে মাসকলাই ফসলের বীজ ও তার সাথে ১০ কেজি করে ডিএপি সার প্রদান করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৮০ হেক্টর জমিতে মাসকলাই ফসলের আবাদ হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার বাটি, দুর্গাপুর, গাছাবাড়ি, রামনগর, দলদলিয়া, রাঘবপুর, ভরতখালী সাঘাটা, গাড়ামারা, সিপি, হলদিয়া, দিঘলকান্দি, বসন্তেরপাড়া, জুমারবাড়ী, সাথায়িা সহ বিভিন্ন চর এলাকায় এ ফসলের আবাদ বেশি হয়েছে।
এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে সাঘাটা, হলদিয়া, ভরতখালী ও জুমারবাড়ী ইউনিয়নের চরাঞ্চলে। উপজেলা কৃষি আফিসার মো: সাদেকুজ্জামান জানান, মাসকলাই ফসল চাষাবাদে প্রণোদনা দেওয়া ও কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করণ ছাড়াও মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সঠিক দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও ফসলের রোগ বালাই দমনে করণীয় বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। যে কারনে ফলনও ভালো হওয়ার আশা করছেন কৃষকরা।
দৈ. বার্তা সরণি / একে/ মিজান