ঋতু হিসেবে শীতের আরও বাকী একমাস। বাংলা প্রকৃতিকে এখন অগ্রহায়নের শুরু। গ্রাম বাংলায় ধান কাটার উৎসব চলছে। তবে ঋতু না এলেও চিরাচরিত সেই গরম আর নেই। গ্রামবাংলা এখন শীতের আমেজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমেছে। উত্তরের বেশির ভাগ জেলায় শীতের অনুভুতি বেশ ভালোই পাওয়া যাচ্ছে। কয়েকটি জেলায় শীত জেঁকে বসেছে। ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে বেশ শীত অনুভূত হচ্ছে।
এদিকে রাজধানীতে আগের সেই গরম নেই। সন্ধ্যার পর বাতাসে শীতল অনুভূতি পাওয়া যাচ্ছে। যদিও এখন গরম কাপড়ের ব্যবহার শুরু হয়নি। তবে সন্ধ্যার এবং শেষ রাতে শীত ফ্যানের ব্যবহার কমছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গরম কিছুটা বাড়ছে। দুপুরের পর থেকে রোদের তীব্রতা কমছে। সন্ধ্যার পর শীতে আবহ শুরু হয়।
সোমবার সকাল ৬টায় চুয়াডাঙ্গায় ১৪ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। এছাড়া কুড়িগ্রামে এদিন সকাল ৭টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৭ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। অন্যদিকে আগের দিন রোববার নওগাঁর বদলগাছিতে সর্বনিম্ন ১৩ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, এক সপ্তাহে এসব জেলার তাপমাত্রা সাত থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে। আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। শেষ রাত থেকে ভোর পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চলে মাঝারি থেকে ঘনকুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশায় ছেয়ে যায় এবং ভোররাত থেকে বৃষ্টি মতো ঝড়তে থাকে কুয়াশা। এই কুয়াশা সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত থাকে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে তাপমাত্রাও বাড়তে থাকে।
এদিকে চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রার কারণে সেখানে শীত জেকে বসেছে। রিকশাচালক ঝন্টু মিয়া বলেন, ‘এখনই হাত-পা মনে হচ্ছে বরফ হয়ে আসছে। সন্ধ্যার পর শীত বাড়ে। আর কয়েকদিন পর রিকশা চালানো কষ্টকর হয়ে যাবে।’ চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যৈষ্ঠ পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান বলেন, ‘গত ১৫ নভেম্বর থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলায় তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে।’
উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটেও ঘন কুয়শায় শীত বাড়ছে । এ জেলা হিমালয়ের অনেকটা কাছাকাছি হওয়ায় তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি ঘন কুয়াশা এবং হিমশীতল বাতাসের প্রবাহ বাড়িয়ে দিচ্ছে শীতের তীব্রতা। সকাল থেকেই ঠান্ডা ও ঘনকুয়াশায় আছন্ন হয়ে আছে গোটা জনপদ। সোমবার ভোর থেকে বেলা ১০ টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশার কারণে পরিবেশ ছিল স্নিগ্ধ ও শীতল। আবহাওয়াবিদদের মতে, আশ্বিন মাসে মৌসুমী বায়ু কম সক্রিয় থাকায় এবং উত্তরীয় বায়ুর কিছুটা প্রভাব থাকায় শেষ রাতে শীত নেমে এলে ঠান্ডা অনুভূত হয়।
স্থানীয়রা জানান, দিন দিন শীতের মাত্রা অনুভূত হচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকেই উত্তরের ঠান্ডা বাতাসে শীত লাগতে শুরু করেছে। শীতে হালকা গরম কাপড় পরতে হয়েছে । মধ্যরাত থেকেই শীত অনুভব হতে থাকে। টিনের চালে টিপটিপ করে শিশির পড়তে শোনা যায়। ভোর পর্যন্ত গায়ে কম্বল ও কাঁথা নিতে হচ্ছে। এ জেলায় অন্যান্য জেলার আগেই শীতের আগমন ঘটে। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত শীতের দাপট বেশি হয়ে থাকে। অন্যদিকে শীতকে কেন্দ্র করে নবান্ন উৎসব শুরু হয়েছে ঘরে ঘরে।
দিনজুড়ে গরম থাকলেও রাতের বেলা শিশিরের ফোঁটায় যেন বৃষ্টির মতো ঝরছে ঠান্ডা। গত কয়েক দিনের শীতের তীব্রতায় বিশেষত শিশু ও বয়স্কদের কষ্ট বেড়েছে। ঘন কুয়াশার কারনে যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। লালমনিরহাট সদর এলাকার আব্দুল মিয়া (৪৫) বলেন, গত শুক্রবার থেকে কুয়াশা ও ঠান্ডা প্রভাব অনেকটাই বেশি মনে হচ্ছে। তারপরও কাজে যাচ্ছি। এমন ঠান্ডা শুরু হলে কয়েকদিনের মধ্যে সকাল সকাল হয়তো কাজে যাওয়া সম্ভব হবে না। একই কথা জানান জেলা সদরের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের দিনমজুর জাহিদ হোসেন(৪০)। এদিকে লালমনিরহাটে পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বাড়তে শুরু করেছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা । নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে রোগীরা। লালমনিরহাট সদরের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ আব্দুল মোকাদ্দেম জানান, হাসপাতালে কয়েকদিন থেকে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা বাড়তেছে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি রোগীদের সেবা দিতে।
##শাহীন/এমআই