অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবার সংবিধান থেকে সমাজতন্ত্র, জাতির পিতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতার মতো কয়েকটি বিষয় বাদ দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন । আজ বুধবার (১৩ নভেম্বর) সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে জারি করা রুল শুনানিতে এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চে এই শুনানি হয়।
তিনি উচ্চ আদালতে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে এটা না-হাজার হাজার মানুষকে গুম করা হবে, ৬০ লাখের বেশি মানুষকে গায়েবী মামলার আসামি করা হবে, বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করা হবে। যাদের হাত নেই এরকম মানুষকে আসামি করে বলা হয়েছে তারা বোমা মেরেছেন। হজে থাকা ব্যক্তিদেরও আসামি করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে এসব হতে পারে না।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আজ পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে জারি করা রুল শুনানিতে এসব কথা বলেন। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চে এই শুনানি হয়।
তিনি বলেন,, সংবিধানের ৭খ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। সংবিধানের মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র না। আমরা সমাজতন্ত্র বাদ চাচ্ছি। শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে কেউ অস্বীকার করে না। জাতির পিতা নিয়ে সিরিয়াস বিতর্ক আছে। জাতি বিভক্ত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তৈরি করা সংবিধানে জাতির পিতা ছিল না। এটি পঞ্চদশ সংশোধনীতে ঢুকানো হয়েছে। জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন করা হয়েছে তার (শেখ মুজিব) বিরুদ্ধে কথা বললেই রাষ্ট্রদ্রোহ হবে। তাকে জাতির পিতা বলা সংবিধানের স্পিরিটের পরিপন্থি।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদ বাতিল চাচ্ছি। এটার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা হয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশে ভাষা দিয়ে জাতি সত্ত্বা নির্ধারণ করা হয় না। ৭ক ও ৭খ অনুচ্ছেদের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার জন্য, গণতন্ত্র ধ্বংস করার জন্য করা হয়েছে। অসৎ উদ্দেশে স্বৈর শাসনকে দীর্ঘায়িত করার জন্য করা হয়েছে। এটি আইনের শাসনের পরিপন্থি।
অনুচ্ছেদের ৮ এর বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে ধর্ম নিরপেক্ষ শব্দটা রাখার দরকার নেই। এই দেশের ৯০ ভাগ মুসলমান। আগে আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের কথা ছিল। এটা যেভাবে আগে ছিল সেভাবে চাচ্ছি। আর ২ক তেই বলা আছে রাষ্ট্র সব ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমান অধিকার ও সম মর্যাদা নিশ্চিত করবে। অনুচ্ছেদ ৯-এ বাঙালী জাতীয়তাবাদের কথা বলা হয়েছে। এটি সাংঘর্ষিক।
অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানিতে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে, মৌলিক অধিকার ধ্বংস করা হয়েছে। কেন পঞ্চদশ সংশোধনী অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না? এটা সংবিধানের অংশ হিসেবে রাখা যাবে না। পঞ্চদশ সংশোধনী রাখা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ৯০’ এর গণ অভুত্থ্যান ও ২৪-এর জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল না হলে আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ শহিদদের আত্মা শান্তি পাবে না।
দৈ. বার্তা সরণি/ একে