রাষ্টায়ত্ব সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রুপালীসহ ১ ডজন কমার্শিয়াল ব্যাংকের প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা ঋণের সুদ আসলে ব্যাংকিং খাতের শীর্ষ খেলাপী প্রতিষ্ঠান আব্দুল কাদের মোল্লার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান থার্মেক্স গ্রুপের পাওনা রয়েছে। বিশাল পরিমান সুদযুক্ত হয়ে এ টাকার অংক প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকংগুলোর জন্য অশণী সংকেত বলে মনে করছেন ব্যাংকিং খাতের বিশেষজ্ঞদের অনেকে ।
এ ঋণের প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকাই নিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক থেকে । এছাড়া আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি , ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়াসহ দেশী ও বিদেশী কয়েকটি ব্যাংক থেকেও প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে থারমেক্স গ্রুপ । এর বাইরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন একাধিক সূত্র ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ১৯৯৭ সালে তৈরী পোষাক কারখানার জন্য রাষ্টায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকে ৯২ লাখ টাকার ক্যাপিটাল মেশনারিজ আমদানির মাধ্যমে আব্দুল কাদের মোল্লার সম্পর্ক গড়ে তোলে । সর্বশেষ ২০২৪ সালের অক্টোবরে চিহ্নিত ঋণখেলাপী আব্দুল কাদের মোল্লার প্রতিষ্ঠিত থার্মেক্স গ্রুপের ৬ প্রতিষ্ঠানের কাছে সোনালী ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা । যা ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে পুরো টাকাই ক্লাসিফায়েড হয়েছে । সোনালী ব্যাংকের এই ঋণ আদায়ে করা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়েছে।
জানা যায়, ২০১৫ সাল পর্যন্ত থারমেক্সের ব্যাংকঋণের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার কোটি টাকার কম। ওই সময়ে শিল্প গ্রুপটির টার্নওভার ছিল প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা । এর পরের পাঁচ বছরে থারমেক্সের ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হলেও আনুপাতিক হারে ব্যবসার টার্ন ওভার বাড়েনি । বিপরীতে বস্ত্র ও সুতায় শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে আরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে বলে জানা যায়। গত কয়েক বছর যাবৎ থারমেক্স গ্রুপের ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধে হয়ে পড়ে অনিয়মিত। প্রায় সব ঋণই ছিল খেলাপি হওয়ার পথে । ইতোমধ্যে সোনালী ব্যাংকের সমূদয় ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকগুলোর উদারতায় আবদুল কাদির মোল্লা বারবার পুনঃতফসিল সুবিধা পেয়েছেন।
২০১০ সালের পর থার্মেক্স গ্রুপের আব্দুল কাদের মোল্লা অপরিকল্পিতভাবে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে থাকেন ।তার নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশাল অংকের বিনিয়োগ করে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। তার প্রতিষ্ঠান সংখ্যা ও বিনিয়োগ বাড়লেও আনুপাতিক হারে বাড়েনি আমদানী-রফতানী বানিজ্য । শতভাগ রপ্তানিমূখী এ সকল প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানি - রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য সফল না হওয়ায় থার্মেক্স গ্রুপের ব্যাংকগুলোতে লোন লায়াবিলিটি (দায় দেনা) বেড়েছে গাণিতিক হারে । এ ছাড়া আমদানী-রপ্তানী সূচক নিম্নমূখীতা, ঋণ প্রবাহের সাথে আমদানি-রপ্তানি বানিজ্যে অসমতা এবং এক্সপোর্ট প্রসিডেও ব্যাংকিং বিধি-বিধান পরিপালিত না হওয়ায় ফোর্স লোন সৃষ্টি করতে হয়েছে কয়েকটি ব্যাংককে । ফোর্স লোনগুলোও যথারীতি পরিশোধে থার্মেক্স সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক যথার্থভাবে রক্ষা না করার অভিযোগ উঠেছে।
ব্যাংকারদের কেউ কেউ গণমাধ্যম কর্মীদের বলেছেন - গত এক যুগ ধরে থার্মেক্সের ব্যবসার গতি-প্রকৃতি, ঋণের পরিমাণ, আমদানি-রপ্তানির আনুপাতিক অবস্থার সার্বিক বিবেচনায় সরকারী ব্যাংকগুলোতে ঋণ পরিশোধের ধারা অনিয়মিত । এ পরিস্থিতিতে সরকারী ব্যাংকগুলো থেকে ভবিষ্যৎ সহায়তা পাওয়ার কোন পথও খোলা রাখেন নি থার্মেক্স ।
সূত্র মতে, আইনী ফাকঁ ফোকর বের করে কোর্টের মাধ্যমে এর মালিক আব্দুল কাদের মোল্লা তার সিআইবি ক্লিন রাখার কৌশল অবলম্বন করে টিকে আছেন । এটিকে কোন দীর্ঘ মেয়াদী সমাধান মনে করছেন না সংশ্লিষ্ট ব্যাংকাররা । তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠানটিকে সামনের দিনগুলোতে ব্যবসায়িক ভাবেই টিকে থাকার চেষ্টা করতে হবে । এর বিকল্প কোন পথ নেই বলে জানিয়েছেন রুপালী, সোনালী, জনতা ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট পদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তা । তারা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসায়িক পথে যদি না হাটে ব্যাংকও লোন আদায়ের বিকল্প পথ বের করে নিতে বাধ্য হবে ।
এ ছাড়া, প্রতিষ্ঠানটির মালিক আব্দুল কাদের মোল্লার সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর পর দুইজন গভর্নরের সাথে ছিলো সুসম্পর্ক। তিনি যেভাবে চাইতেন সেভাবেই গভর্নরদ্বয় তার লোন নিয়মিত রাখার পথ করে দিয়েছেন । ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের এই দুইজন গভর্নরের অযাচিত হস্তক্ষেপও লোন দানকারী ব্যাংক সমূহকে বিপদের সম্মুখীন হতে হয়েছে বলে করেন অনেকে।
নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার পাঁচকান্দি গ্রামের আব্দুল মজিদ মোল্লা ও নূরজাহান বেগমের পুত্র আব্দুল কাদির মোল্লা । তিনি ১৯৬১ সালের ৮ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন । ১৯৭৪ সালে ৮ম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় তার বাবার মৃত্যু হলে সংকটাপন্ন পারিবারিক অবস্থার মধ্যেও এসএসসি পাশ করেন । এসএসসি পাশের পর রিক্তহস্তে ভাগ্যান্বেষণে বের হওয়া আব্দুল কাদের মোল্লা স্টাইফেন নিয়ে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি থেকে ডিপ্লোমা শেষ করেন । এরপর সিংগাপুরে পাচ বছর একটি শিপইয়ার্ডে চাকুরী করে দেশে ফিরে আসেন।
সূত্র মতে, ১৯৮৫ সালে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে ছোট একটি পদে চাকুরী নেন। সেখানে বারো বছর চাকুরী শেষে ’৯৭ সালে স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অবসর নেন তিনি। তিতাস গ্যাসের চাকুরী কালীন সময়ে আব্দুল কাদির মোল্লা অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদ অর্জন করেন বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ । ইংরেজী দৈনিক ডেইলী স্টারসহ কয়েকটি পত্রিকায় ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তিতাসের সাবেক এই ৪ হাজার টাকা বেতনের বিক্রয় সহকারী কাদের মোল্লাকে নিয়ে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় । ওই প্রতিবেদন সমূহে বলা হয়েছে, টাক্সফোর্স ২১ শত কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পেয়েছে আব্দুল কাদের মোল্লার। রহস্যজনক কারণে ঐ তদন্ত বেশি দূর এগোয়নি। তখন বিষয়টি ছিল টক অব দ্যা কান্ট্রি ।
সূত্র মতে, কাদের মোল্লা তিতাস গ্যাস কোম্পানিতে এক সময় মাত্র ১২ বছরের চাকুরী জীবনে বিপুল সম্পদ অর্জন বিপদের কারন হতে পারে আচঁ করতে পারেন। ১৯৯৭ সালে চাকুরী ছেড়ে শিল্প উদ্যোক্তা হন । এরপর এক যুগের সফলতায় আব্দুল কাদের মোল্লার থার্মেক্স গ্রুপ। থার্মেক্স গ্রুপের অধীনে রয়েছে বর্তমানে ষোলটি শিল্প প্রতিষ্ঠান । ব্যবসায়িক জীবনে তিনি হয়েছেন একটি বীমা কোম্পানির পরিচালক ও এসবিইসি ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যান। হয়েছেন কর বাহাদুর, পেয়েছেন মাদার তেরেসাঁ পুরস্কারও ।
সূত্র মতে, সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন (২০২৩) অনুযায়ী, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করবে না, তাদের ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে বিবেচনা করা হবে । মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঋণ গ্রহণ ও ব্যাংকের কাছে ঘোষিত উদ্দেশ্যে ঋণের টাকা ব্যয় না করলে ওইসব গ্রাহককে বিবেচনা করা হবে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবেও । ঠিক ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপির এই কাজটিই করেছেন থার্মেক্সের মালিক আব্দুল কাদের মোল্লা । বিভিন্ন সভা-সেমিনারে তিনি বলেছেন, তার উপার্জনের ২৫ পার্সেন্ট জনকল্যাণে ও শিক্ষা বিস্তারে ব্যয় করছেন। বছরে বিশাল অংকের টাকা তিনি ব্যয় করছেন সিএসআরের এই খাতে । সে হিসাবে তার ব্যবসায়িক স্ট্যাবিলিট যথেষ্ট মজবুত । বিপুল পরিমাণ ব্যবসা না করলে তিনি বিশাল পরিমানের এ ব্যয় তিনি করছেন কিভাবে ? এ সব দিক বিবেচনা করে অনেকে তাকে একজন ইচ্ছাকৃত খেলাপী হিসেবে আখ্যাও দিয়েছেন।
ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোনো ঋণখেলাপির ব্যাংক পরিচালক হওয়ার সুযোগ নেই । অথচ বিভিন্ন ব্যাংকে থার্মেক্স গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো খেলাপি হয়ে পড়লেও উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের (এসবিএসি) পরিচালক ও চেয়ারম্যানও হয়েছেন থার্মেক্সের মালিক আবদুল কাদির মোল্লা। থারমেক্স গ্রুপকে দেয়া ঋণের বিভিন্ন ব্যাংকের তথ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শুরুর প্রথম দশকে স্বাভাবিক গতিতেই অগ্রসর হয়েছে থারমেক্স গ্রুপ। এ সময়ে গ্রুপটির ব্যাংক ঋণ ও ব্যবসায়িক টার্নওভার ছিলো সমান্তরালভাবে । বেশ সুনামের সাথেই ব্যবসা পরিচালনা করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি । তার এই সুনামের ফলে সর্বোচ্চ সুবিধাও দিয়েছিল ব্যাংকগুলো।
২০১৯ সালে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য দুর্যোগ বয়ে আনলেও থারমেক্সের জন্য তা ছিলো আশীর্বাদ স্বরুপ । করোনার কারণে বছরব্যাপী ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধের বাধ্যবাধকতা শিথিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতি ছাড়ের এ সুযোগ পুরোদমে কাজে লাগিয়েছেন আবদুল কাদির মোল্লা। উপরি পাওনা হিসেবে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক থেকে পেয়েছেন স্বল্প সুদের আরো ২০০ কোটি টাকার প্রণোদনা।
এ গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই পোশাক খাতের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ রফতানিমুখী বস্ত্র শিল্পের । গ্রুপটির প্রচ্ছন্ন রফতানি টার্নওভারের পাওয়া একটি ওই পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তিন বছরের মধ্যে কোনো বছরেই থারমেক্স গ্রুপের সুতা ও কাপড় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর রফতানি টার্নওভার ১৩ কোটি ডলার বা ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার বেশি ছিল না ।
রফতানি নীতি ২০১৮-২১ অনুযায়ী, রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্যের ন্যূনতম ৮০ শতাংশ রফতানি করতে হবে । অবশিষ্ট ২০ শতাংশ পণ্যের শুল্ক ও কর পরিশোধ সাপেক্ষে স্থানীয় বাজারে বাজারজাতের সুযোগ রয়েছে । সে হিসাবে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার রফতানির বিপরীতে ২৭৩ কোটি টাকার বেশি পণ্য স্থানীয় বাজারে বিক্রির সুযোগ নেই থারমেক্সের ।
থারমেক্স গ্রুপের পণ্য রফতানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে দুই বছর ধরে । অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৮ সালে থারমেক্স গ্রুপের সুতা উৎপাদন ও ডায়িংয়ের পাঁচটি কারখানা ইউনিট থেকে সুতার প্রচ্ছন্ন রফতানি হয় প্রায় ৫ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের । এর পরের বছর ২০১৯ সালে ওই পাঁচটি ইউনিটে উৎপাদিত সুতা রফতানি হ্রাস পেয়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ । রফতানির নেতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে বিগত ৪ বছরও ।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, থারমেক্স গ্রুপকে দেয়া ঋণের বড় অংশই ঝুঁকিপূর্ণ । সর্বশেষ অনিয়মের মাধ্যমে গ্রুপটির ঋণ পুনঃতফসিলের বিষয়টিও শনাক্ত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক । ‘ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-২’ থেকে এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, বিআরপিডি ও অফ-সাইট সুপারভিশনের অনাপত্তি পত্রের শর্ত পরিপালন না করে থারমেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে । এ পুনঃতফসিল প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ব্যাংকের বোর্ড ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ । এসকল অনিয়মের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবীর ও রউফ তালুকদার এর সরাসরি তদারকী ছিল বলে জানা যায়। যদিও রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকেই সরকার ঘোষিত প্রণোদনার ৮৪ কোটি টাকা পেয়েছে থারমেক্স গ্রুপ ।
সোনালী ব্যাংকের শির্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেন, এরই মধ্যে থারমেক্সের ঋণের লাগাম টেনে ধরা হয়েছে। মূলত ঋণপত্রের দায় সমন্বয় না হওয়ার কারণে ফোর্সড লোন সৃষ্টি হয়েছে । কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা গ্রুপটির ঋণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।
থারমেক্স গ্রুপের কাছে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে আরেক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক জনতার। এ ঋণ আদায় নিয়েও বিপদে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি। যদিও প্রণোদনা হিসেবে গ্রুপটিকে আরো ৪৭ কোটি টাকা দিতে হয়েছে ব্যাংকটিকে। আবদুল কাদির মোল্লার প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের ঋণ আছে ৭০০ কোটি এবং রূপালী ব্যাংকের ৩৫০ কোটি টাকার মতো। ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করায় প্রতিনিয়ত এ ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। আবার প্রণোদনা হিসেবে থারমেক্সকে ৫৭ কোটি টাকা দিয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। রূপালী ব্যাংক থেকেও পেয়েছে ৫২ কোটি টাকা ।
উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন “পাঁচকান্দী ডিগ্রি কলেজ” । তিতাসের ৪ হাজার টাকা বেতনের একজন কর্মচারী একটি ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠিত করার মতো টাকা কোথায় পেলেন এ নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন । এ দিকে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তার দেয় দান-অনুদান গ্রহণ ও নামকরণ নিয়ে শিক্ষাবিদদের মধ্যে রয়েছে বিশেষ বিতর্ক। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জনকল্যাণে, শিক্ষা বিস্তারে নিয়োজিত দেশের ব্যাংকিং খাতের শীর্ষ ঋণ খেলাপীদের একজন শিল্পপতি এই আব্দুল কাদের মোল্লা । বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে থার্মেক্স গ্রুপের বিনিয়োগ ট্রেন্ড শুরু হয় ২০১০ সালের পর। এই ব্যাংকগুলোরও কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে থার্মেক্সে । এ সকল ব্যাংকের সরকারী ব্যাংকগুলোতে গ্রুপটির থাকা বিনিয়োগের মান ও বানিজ্যিক শিষ্টাচার, আমদানি রপ্তানি সূচকের ভারসাম্যতা ও আরো কঠোরভাবে যাচাই বাছাই করে নেয়া আবশ্যক ছিলো বলেও মনে করছেন ব্যাংক খাতের কয়েকজন বিশ্লেষক। তারা মনে করছেন, কোনভাবে একটি ব্যাংক আটকে গেলে সবগুলো ব্যাংকেরই অবস্থা খারাপের দিকে যাবে । এ ধরনের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের সতর্কতা থাকা আবশ্যক ছিলো।
আ. দৈ/ একে