শীত মৌসুমের পেঁয়াজ চাষ করতে গিয়ে বীজের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। দামের কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কার কথা বলছেন কৃষকরা। গত মৌসুমের চেয়ে চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ বীজ দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। চড়া মূল্যে বীজ কিনে ফলন ও আশাতীত দাম পাবেন কি না, তা নিয়ে কৃষকদের মধ্যে সংশয়ও কাজ করছে। রোববার (২৭ অক্টোবর) সকালে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কাজিরহাট বাজারের এমন চিত্র দেখা যায়।
তবে কৃষি বিভাগ বলছে, বেশকিছু দিন থেকে পেঁয়াজের দাম চড়া। এ মৌসুমে পেঁয়াজ বীজের দাম বেশি। তারপরও কৃষকরা পেঁয়াজ রোপণ করবেন। গত বছর পেঁয়াজ চাষ করে ভালো দাম পেয়েছেন কৃষকরা। খরচ বেশি হলেও পেঁয়াজ চাষ ব্যাহত হবে না।
জাজিরা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের পলী এলাকার জমিগুলোতে শীত মৌসুমের পেঁয়াজ বীজ রোপণ করতে শুরু করেছেন কৃষকরা। অতি চড়ামূল্যে বীজ কিনতে গিয়ে কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কাজিরহাট বাজারে পেঁয়াজ বীজের প্রকার ভেদে (ছোট, বড়) ৮ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা প্রতি মণ (৪০ কেজি) বীজ বিক্রি হচ্ছে। কৃষকরা বলছেন, এ রকম বীজ গত রোপণ মৌসুমে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এবার বীজের দাম কৃষকের নাগালের বাইরে।
উপজেলার পালেরচর ইউনিয়ন গ্রামের কৃষক মোতালেব হোসেন, আনোয়ার আকন বলেন, এবারে পেঁয়াজ বীজের দাম দ্বিগুণ। ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বীজ বিক্রি হচ্ছে। তাদের দেড়- দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করার নিয়ত ছিল। বীজের দাম অস্বাভাবিক হওয়ায় সে আশা ভঙ্গ হয়েছে এবার। তারা এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করবেন। বীজের ছোট বড় আকার ভেদে এক বিঘা জমিতে ৫ থেকে ৬ মণ বীজ প্রয়োজন হয়। সে হিসেবে এক বিঘা জমির জন্য বীজ কিনতে তাদের ৪০- ৫০ হাজার টাকা। আবাদে রাসায়নিক সার, সেচ ও শ্রমিকের দিন মজুরি তো আছেই।
উপজেলার বিকেনগর গ্রামের কৃষক হালান মিয়া বলেন, গত মৌসুমে তারা ৫ হাজার টাকা মণ দরে বীজ কিনে ছিলেন। এবার দাম দুই থেকে তিনগুণ। ৮-১০ হাজার টাকা মণ। হালান মিয়া আরও বললেন, তিন মাসের ফসল হিসেবে গত মৌসুমে পেঁয়াজ চাষ করে ভাল লাভ হয়েছে। তবে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হলে দাম কমে যায়।
উপজেলার কাজিরহাট বাজারের পেঁয়াজ বীজ ব্যবসায়ী মামুন ও মতিউর রহমান(মতি খাঁ) বলেন, এবার ছোট সাইজের পেঁয়াজ ৮-১০ হাজার টাকা এবং একটু বড় সাইজ ৭ হাজার টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। গত মৌসুমের চেয়ে এ মৌসুমে দাম খুবই বেশি। দাম বেশি হওয়ায় বিক্রি খুব একটা ভালো না।
জাজিরা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় চলতি মৌসুমে এ বছর পেঁয়াজ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা না হলেও ,গত বছর রোপণ হয়েছে ২৯৫৭ হেক্টর জমিতে। এ বছর এ পরিমাণ জমি থেকে ৪৪ হাজার ৩৫৫ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মুসলিমা জাহান রুনিয়া বলেন, পেঁয়াজ বীজ ছোট সাইজ (জিরো সাইজ) ১০ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ফসলে প্রতি বছর কমবেশি ভালো লাভ হয়। এ জন্য উৎপাদন খরচ বেশি হলেও কৃষক পেঁয়াজ চাষ করবে। উৎপাদন ব্যাহত হবে না।
দৈ. বার্তা সরণি / একে/রাজিব